বুধবার বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে পরিচয়পত্র পেশ করতে গেলে আবদুল হামিদ এ আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতির উপ প্রেস সচিব মুন্সী জালাল উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি সংঘঠিত সন্ত্রাসী ঘটনা তাদের বিষয়ে সবচেয়ে সুন্দর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি বলেন।
রাষ্ট্রপতি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ধন্যবাদ জানান।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্বতঃস্ফূর্ত, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের চাপ অব্যাহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা ও রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ায় লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪৮ বছর বয়সী মুহিবুল্লাহকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে একদল অস্ত্রধারী। তিনি ছিলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামে রোহিঙ্গাদের একটি সংগঠনের চেয়ারম্যান।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুর এলাকার স্কুলশিক্ষক মুহিবুল্লাহ পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে ‘রোহিঙ্গাদের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বিবেচিত ছিলেন।
মুহিবুল্লাহকে হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ, ইউএনএইচসিআরসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে শ্রেণিতে উত্তরণের পরও বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রদত্ত অগ্রাধিকার সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
উপ-প্রেস সচিব বলেন, “ইইউ দূত পরিচয়পত্র দিতে গেলে রাষ্ট্রপতি বলেন, গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সর্ববৃহৎ গন্তব্য। এছাড়া, তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের অন্যতম প্রধান উৎস। বিগত দিনে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম আস্থাশীল অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের এ সম্পর্ক আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রয়োজনীয় তিনটি শর্ত পূরণ হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বা ইউএন-সিডিপির ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এখন অন্তর্বর্তীকালীন সময় চলছে; সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৬ সালের পর থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে নতুন পরিচয় লাভ করবে।
সেই পরিচয়ের অর্জনের পর বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়বে, বিনিয়োগের জন্য আরও বেশি আগ্রহী হবেন বিদেশিরা। কিন্তু একই সঙ্গে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে এতোদিন উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে পাওয়া কিছু সুযোগ-সুবিধার বিলোপ ঘটতে পারে।
মহামারীর ধাক্কা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ উন্নত দেশগুলোতে সেই সুযোগ-সুবিধাগুলো যেন চলমান থাকে সেজন্য দেন-দরবার করার কথা বলে আসছেন সরকারের জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা।
ইইউ দূতের সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।