উখিয়া ক্রাইম নিউজ ডেস্ক::
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির নির্মান ও তাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত দেড় শতাধিক এনজিও নির্বিচারে পর্বত সমমানের পাহাড়, টিলা কেটে সমতল করলেও মাটি ধরে রাখার কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে পাহাড় কাটা মাটিতে ভরাট হয়ে নব্যতা সংকটে পড়েছে অধিকাংশ খাল, ছড়া ও জলাশয় এমনকি পলিজমে চাষাবাদ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় ৫ শতাধিক হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি। বৃষ্টির পানি পাহাড়ী ঢলে অধিকাংশ নিচু এলাকা জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে বলে দাবী করছেন কৃষক ও ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসী।
কৃষি বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করা হলে তারা জানান, সরকার রোহিঙ্গাদের মানবিক কারনে আশ্রয় দিয়েছে। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে এনজিওরা তাদের আখের গোছানোর জন্য উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী, সফিউল্লাহ কাটা, তাজনিমারখোলা, মনিরঘোনা, বালুখালী, জামতলী, তেলখোলা, মোছারখোলা, রাজাপালং ইউনিয়নের লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, মাছকারিয়া এলাকায় প্রায় শতাধিক পর্বত সমমানের পাহাড় টিলা কেটে সমতল করেছে। সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে এনজিও সংস্থার বিভিন্ন আবাসন ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবির।
পালংখালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও কৃষক মোজাফফর সাওদাগর জানান, রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের নামে যত্রতত্র পাহাড় কাটা হলেও পাহাড়ের মাটি সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারনে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের সাথে মাটি গিয়ে থাইংখালী ও পালংখালী খাল ভরাট হয়ে নব্যতা হারিয়েছে। এসব এলাকায় চাষাবাদ উপযোগী ৫ শতাধিক হেক্টর জমিতে বালি মিশ্রিত মাটির পলিজমে আমনচাষাবাদ ব্যহত হচ্ছে। পানি চলাচলের বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় অধিকাংশ নিচু এলাকা জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। থাইংখালীর চিংড়ী চাষী আলতাজ আহম্মদ জানান, তার প্রায় ৫ একর জমিতে পাহাড়ের মাটি ও বালি জমেছে।ওই জমি চাষাবাদ উপযোগী করতে তাকে শ্রমিক দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে মাটি সরাতে হচ্ছে।
সরজমিন থাইংখালী খাল ঘুরে স্থানীয় বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড় কাটা মাটিতে পুরো খালটি ভরাট হয়ে গেছে। এ খাল অবিলম্বে খননের আওতায় আনা না হলে পুরো পালংখালী ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্বয়ে এনজিওদের সাথে বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে এনজিওরা ৬ টি খাল খনন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে ৯ হাজার ৪শ ২০ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। তিনি বলেন পাহাড় কাটা মাটি বিভিন্ন কৃষি জমিতে গিয়ে পলিজমে উঠার কারনে প্রায় ১শত হেক্টর জমিতে আমনচাষ করা সম্ভব হবে না। কৃষি জমি খালের ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, সরকার মানবিক কারনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এনজিও গুলো যেভাবে পাহাড় কেটেছে তাতে পরিবেশের মারাতœক বিগ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। পাহাড় কাটা মাটি যাচ্ছে জমিতে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পাশাপাশি মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করার জন্য নোটিশ প্রধান করা হয়েছে। তারা যদি না মানে আমার করার কিছু নেই। দক্ষিন বন বিভাগীয় কর্মকর্তা আলী কবির জানান, পাহাড় কাটার ব্যপারে বেশ কয়েকবার পদক্ষেপ নিয়েও কোন কাজ হয়নি। তাই এব্যাপারে আমার করার কিছু নেই। যেহেতু সরকার মানবিক কারনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের নিরাপদ বসবাসের নামে এনজিওরা নির্বিচারে পাহাড় কাটছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জআমান বলেন, এনজিও সংস্থা আইএমও বালুখালী খালকে খনন করেছে। কিন্তু পালংখালী খাল খননের ব্যপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান অভিযোগ করেছে। বিষয়টি তিনি সরজমিন পরিদর্শন করার জন্য সংশ্লিষ্ট এনজিও সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন।