উখিয়া ক্রাইম নিউজ ডেস্ক::
মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী কক্সবাজারে ১ হাজার ৫শ ১১১ জন তালিখাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী রয়েছে। সে অনুযায়ী ইয়াবার স্বর্গ্যরাজ্য হিসাবে খ্যাত উখিয়ার ৩ শতাধিক শীর্ষ ও ৫শতাধিক খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী দাপটের সাথে ইয়াবার চালান পাচার করে যাচ্ছে। এসব ইয়াবা কারবারীর বেশির ভাগ সদস্য সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অথবা ক্যাম্পের বিভিন্ন স্থানে রাত কাটায়। যে কারনে তারা বারবার ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। পুলিশ সড়ক পথে চালানকালে কিছু কিছু ইয়াবা ও পাচারকারী আটক করলেও বড়বড় ইয়াবার চালান অনায়সে গন্তব্য স্থানে পৌছে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের আরকান রাজ্য এখন রোহিঙ্গা শূন্য বলেলই চলে। তবে ভুরি ভুরি ইয়াবার চালান কিভাবে, কোথায় থেকে, কেমন করে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে কুতুপালং ক্যাম্পে ১৯৯১ সনে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নেতা ডাঃ জাফর আলম প্রকাশ ডিপু জাফর সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমার সীমান্তে যে সব বিজিপি দায়িত্ব পালন করছে মূলত তারা খুব কম বেতনে চাকুরী করছে। এসব বিজিপি সদস্যরা সেখান থেকে পন্য সামগ্রী এখানে পাচার কাজে পাচারকারীদের সহযোগিতা করে উৎকোচ আদায় করে। বর্তমানে এসব বিজিপি সদস্যরা নিজেরাই ইয়াবাকারবারী বনে গেছে। টাকার লোভে তারা ইয়াবার চালান সীমান্তের নাফ নদী সংলগ্ন কাটা তারের বেড়া পার করে দিচ্ছে। এখানকার পাচারকারীরা এসব ইয়াবার চালান তাদের নিয়ন্ত্রনে রেখে সময় সুযোগ বুঝে তাদের সিন্ডিকেটের লোকজনদের হাত বদল করছে।
সীমান্তের আঞ্জুমান পাড়া, বটতলী, ধামনখালী, রহমতেরবিল, বালুখালী পানবাজার। এখন ইয়াবা পাচারের টার্নিং পয়েন্টে পরিনত হয়েছে দাবী করে স্থানীয় প্রত্যদর্শী ব্যবসায়ী রহমত উল্লাহ, কৃষক হামিদ হোসেন ও শামশুল আলম জানান, প্রতিদিন সন্ধায় শতশত রোহিঙ্গা চোরাই পথে মিয়ানমারে যাচ্ছে। তারা সীমান্তের বিজিপিকে ম্যানেজ করে গভীর রাতে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে। কুতুপালং ক্যাম্পে ২০১২ সালে আশ্রীত বস্তি ম্যানেজম্যান্ট কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, ২৫ আগষ্টের পর থেকে যেসব রোহিঙ্গারা উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে এদের অধিকাংশ ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনধিকার প্রবেশের উপর প্রশাসনের বাধ্যবাদকতা বলবত থাকায় এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ধরাছোয়ার বাইরে থেকে ইয়াবাকারবার চালিয়ে যাচ্ছে। বদনামের ভাগি হচ্ছে পুরো রোহিঙ্গা জনগোষ্টি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, পালংখালীর বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অভিযোগ করে জানান, পালংখালী, থাইংখালী ও বালুখালীতে প্রায় ৩ শতাধিক ইয়াবাকারবারী রয়েছে। তাদের রয়েছে অঢেল সম্পক্তি, আলিশান বাড়ীঘর ও কোটি টাকার ব্যবসা বানিজ্য। তারা হঠাৎ করে এত টাকার মালিক কি ভাবে হল তা যদি গোয়েন্দা সংস্থা ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদুক) চুল ছেড়া তল্লাসি চালায় থলের বেড়াল বেরিয়ে আসবে। এসব এলাকার অবিভাবক মহল তাদের ছেলে সন্তানরা অনৈতিক ব্যবসায়ী জড়িয়ে পড়ার কারনে পারিবারিক ভাবে চরম অশান্তিতে দিন যাপন করছে। এনিয়ে অনেকেই থানায় ও আদালতের আশ্রয় নিয়ে অবাধ্য ছেলে বিচার দাবী করছে। উক্ত শীর্ষ ইয়াবাকারবারীরা হলেন, থাইংখালী সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবাকারবারী ও ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রক রহমতেরবিল গ্রামের কলিমুল্লাহ বলির ছেলে কামাল উদ্দিন প্রকাশ ইয়াবা কামাল, একই গ্রামের মৃত ফরিদ আহম্মদ ও সাবেক মহিলা মেম্বার নুর বানুর ছেলে সোহেল প্রকাশ ইয়াবা সোহেল, একই এলাকার আহম্মইদ্যার ছেলে শাহজান প্রকাশ ইয়াবা শাহজান, একই গ্রামের মৃত হোছন আলীর ছেলে ফারুক আহম্মদ প্রকাশ ইয়াবা ফারুক, মৃত কাদের বক্সুর ছেলে জয়নাল আবেদীন ভুট্রো, থাইংখালী জামতলী গ্রামের নুর আহম্মদের ছেলে গফুর আলম, ধামনখালী গ্রামের সোলতান আহম্মদের ছেলে আব্দুর রহিম প্রকাশ কালা ভাই, থাইংখালী গজোগুনা গ্রামের নুর আহম্মদ প্রকাশ মিজ্জার ছেলে গুরা মিয়া প্রকাশ ইয়াবা গুরা, বালুখালী পানবাজার এলাকার আব্দুল মজিদের ছেলে জাহাঙ্গীর প্রকাশ ইয়াবা জাহাঙ্গীর, রত্নাপালং ইউনিয়নের রুহুল্লার ঢেবা গ্রামের বাছা মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর প্রকাশ ইয়াবা জাহাঙ্গীর, রাজাপালং ইউনিয়নের হিজোলীয়া গ্রামের মিরজাফর, একই ইউনিয়নের লম্বাঘোনা গ্রামের মৃত ফকির আহম্মদের ছেলে মাহমুদুল করিম কোখাসহ প্রায় ৩শতাধিক ইয়াবা গডফাদাররা গ্রেপ্তার এড়াতে নাফ নদী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও গ্রামে গঞ্জে আত্নগোপনে থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাড়ি হাড়ি ইয়াবা পাচার করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিনত হয়েছে।
সারা দেশে মাদক বিরোধী অভিযান করতে গিয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে শতশত মাদক ব্যবসায়ী আটক এবং মাদক ব্যবসায়ীর সাথে বন্ধুক যুদ্ধে অনেক মাদক ব্যবসায়ী হতাহত হলেও উখিয়ায় তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। আটক হয়নি শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী। পালংখালী এলাকার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গ্রেপ্তার এড়াতে মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই নাফ নদীর বেড়িবাধ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়ীঘরে রাত যাপন করে।
এপ্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, পুলিশ প্রতি রাতে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়দের বাড়ী ঘরে হানা দিয়ে তল্লাসি চালাচ্ছে। কিন্তু দুবৃত্তরা রাতে বাড়ীতে না থাকায় তাদের আটক করা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, চলতি মাসে সড়ক পথে পাচারকালে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক ইয়াবা ও ২০ জনেরমত পাচারকারীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরন করেছে।